রঙিন পর্দার শিল্পীদের সাদাকালো বনভোজন; সদস্য পদ ঘিরে ক্ষোভ

রঙিন পর্দার শিল্পীদের সাদাকালো বনভোজন; সদস্য পদ ঘিরে ক্ষোভ

শুরু থেকেই একের পর এক বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটিকে। বরেণ্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন নেতৃত্বাধীন ২০২২-২৪ মেয়াদের কমিটি নানা কারণে সমালোচিত। যার শুরুটা ভোটে পরাজিত হয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়ে সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করা নিপুণকে ঘিরে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বনভোজন মানেই জাঁকজমক আয়োজন। বিগত দিনে এমন চিত্র দেখা গেলেও দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে তার বিপরীত চিত্র। সদ্য সমাপ্ত রঙিন পর্দার তারকাদের বনভোজন ছিল সাদাকালো। ক্রমশ জৌলুস হারাচ্ছে শিল্পী সমিতির আয়োজন। তারকাদের বনভোজন এবারও ছিল তারকা শূন্য।

খাবার ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনার ছাপ উপস্থিত শিল্পীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। এতে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করলেও কেউ কেউ ফিঁসফাঁস করেছেন আরেকটু যত্ন পাবার আশায়। এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

তবে মূল ঘরানার ব্যস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের না দেখে অনেকেই হতাশ হন। বিভাজনের চিত্র ফুটে উঠে। অভিযোগ ওঠে অনেকের দাওয়াত না পাওয়ার ব্যাপারেও। তাদের একজন দুই মেয়াদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েও চেয়ারে বসতে পারেননি তিনি। জায়েদ খান অভিযোগ করেছেন- দাওয়াত পাননি। তবে অন্য অনেকেই দাওয়াত পেলেও আসেননি, যদিও এর কারণ জানা যায়নি।

এ আয়োজনে সমিতির সদস্যদের দেখা না গেলেও অচেনা মানুষদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল পিকনিক স্পট। ঢাকার অদূরে আশুলিয়া প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউজে শনিবার (০২ মার্চ) এ মিলনমেলার আয়োজন করা হয়।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির পিকনিক তার নিজস্বতা হারিয়েছে, গেল বছর শিল্পী সমিতির বার্ষিক বনভোজন কেন্দ্র করে কথাগুলো বলেছিলেন চিত্রনায়িকা নূতন। ক্রমশ তার কথা বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে।

বনভোজনে এদিন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ ছাড়াও তাদের ক্যাবিনেটের শাহনূর, সাইমন সাদিক, রিয়াজ, ইমন, জেসমিন, যাদু আজাদসহ বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিল্পী সমিতির সদস্য ফেরদৌসকে দেখা গেছে।

এদিকে, শনিবার বিকেলে সাংস্কৃতিক আয়োজনে প্রযোজক আরশাদ আদনানকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদের কাগজ দেওয়া হয়। তিনি আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এমপির হাত থেকে রিসিট গ্রহণ করেন। এ সময় শিল্পীদের মধ্যে আরশাদ আদনানের সদস্য পদ পাওয়ার কারণ নিয়ে ফিঁসফাঁস ওঠে। অনেক সিনিয়র শিল্পী ও কুশলীর মাঝে গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগও করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পী সমিতির একাধিক নেতা সাংবাদিকদের কাছে অসহায় জবাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন- এমন কিছু হবে সেটা আমাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়নি। এটা বিব্রতকর! যদিও আরশাদ আদনান কোন সিনেমায় অভিনয় করেছেন, এর কোনো ধারণা মঞ্চ থেকে দেননি বর্তমান কমিটির নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজের প্রযোজিত ‘ইউটার্ন’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আরশাদ আদনান। অনুসন্ধানে তার আর কোনো সিনেমার খবর পাওয়া যায়নি।

শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জানা যায়, সমিতির সদস্য হতে হলে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ৫টি সিনেমা মুক্তি পেতে হয়। তাহলেই তিনি সদস্য হতে পারবেন। তবে আরশাদ আদনানের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। ১ সিনেমায় অভিনয় করেই সমিতির সদস্য হয়েছেন তিনি!

বনভোজনে আদনানের সদস্য হওয়ার খবরের পর চাউর হয় আসন্ন নির্বাচনে তাকে সভাপতি করে নিপুণ সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়ে প্যানেল সাজাবেন। এ জন্যই তাকে সদস্য করা হয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিল্পী সমিতির কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে জয়ী গুরুত্বপূর্ণ পদের নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, তাকে (আরশাদ আদনান) কোন সিনেমার জন্য সদস্য করেছে কমিটি থাকা সত্ত্বেও কিছুই জানি না। শিল্পী সমিতির সদস্য হতে হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৫টি সিনেমা মুক্তি পেতে হয়। সে কি কি সিনেমায় অভিনয় করেছে আমি অবগত নই।

যোগ করে তিনি আরো বলেন, শিল্পী সমিতি একেক জনের বাবা-দাদার সম্পত্তি হয়ে গেছে। যে যার যার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কেউ এ নিয়ে কথা বলছে না। শিল্পীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সিনিয়র শিল্পীদের এ নিয়ে কথা বলা উচিত। এখনই সময় শিল্পীদের সচেতন হওয়া। নির্বাচনে তাদের সচেতন হয়ে ভোট প্রয়োগ করতে হবে।

গতবারের মতো এবারও বনভোজনে শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের একাংশকে দেখা যায়নি। এই তালিকায় ছিলেন—মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত মনোয়ার হোসেন ডিপজল, মাসুম পারভেজ রুবেল, আলী রাজ, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, জয় চৌধুরীকে। এছাড়া কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে জয়ী সাবরিনা সুলতানা কেয়াও বনভোজনে অংশ নেননি। জানা গেছে, কেয়া পিকনিক সম্পর্কে অবগত নন।

বর্তমান আলো /নীরা