‘আমাদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে সিনেপ্লেক্স’

‘আমাদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে সিনেপ্লেক্স’

বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের উদাসীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দাবি করে প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেছে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ডেডবডি’ সিনেমার নির্মাতাও কলাকুশলীরা। রোববার (১২ মে) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এর সামনে মানববন্ধন করেন তারা। পরে এফডিসির ভিআইপি প্রজেকশন হলে সংবাদ সম্মেলন করেন। 

এ সময় নির্মাতা ও পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহবায়ক খোরশেদ আলম খসরু এবং পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চিত্রনায়ক ওমর সানী সহ চলচ্চিত্রের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইকবাল বাংলা সিনেমার প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার নানা দিক তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সিনেপ্লেক্স তার সিনেমা ‘ডেডবডি’কে মেরে ফেলেছেন বলেও দাবি করেন।

প্রতিবাদ সভায় ইকবাল বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের সিনেমাকে কি করে ধ্বংস করে দেওয়া যায় তার সুপরিকল্পিত চত্রুান্ত করছে সিনেপ্লেক্সে। তারা আমাদের দেশী সিনেমা ভালো করে চলুক তা যেনো চাচ্ছে না। এ দেশে হিন্দি সিনেমাও চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সের অসংগতি দিন দিন বেড়ে চলছে। তারা এমন সময় বাংলাদেশের সিনেমা শো দিয়ে থাকেন তখন দর্শক সিনেপ্লেক্সে যান না। ‘আমার সিনেমা ডেডবডি ঈদে মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। লায়নস সিনেমাস সহ বেশ কয়েকটি বড় বড় হলও চূড়ান্ত হয়েছিল। পরে সিনেপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে ঈদে অনেকগুলো সিনেমা আসছে আমরা আপনার সিনেমা আপাতত নিতে পারছি না। আপনি ঈদের দুই সপ্তাহ পরে মুক্তি দেন। তাদের কথামত আমি দুই সপ্তাহ পরই মুক্তি দেই। কিন্তু এখানেও তাদের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। তারা আমার সিনেমা যে হলে মুক্তি দিয়েছে সে হলগুলো আমিও চিনি না। এক কথায় তারা আমার সিনেমাকে কিল করেছে।’

ইকবাল আরও জানান, সিনেপ্লেক্সে থেকে আমার সিনেমা নামিয়ে দেওয়া হয়নি। আমার ডেডবডি সিনেমা আমিই নামাতে বলেছি। তারা যে গেমটা আমার সঙ্গে খেলেছে তার প্রতিবাদেই আমার সিনেমা আমি নামাতে বলেছি। আমি যদি ঈদেও আসতাম। সিনেপ্লেক্সে যদি আমার সিনেমা না চালাতে তাহলেও আমার সিনেমার মৃত্যু ঘটত না। সুপারহিট হত।

পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সের শেয়ার মানি নিয়ে তো অসংগতি রয়েছেই। কলকাতার সিনেপ্লেক্সেসহ সিনেমার হলগুলো ফিফটি ফিফটি শেয়ারমানি দিয়ে থাকে। তার আমাদের এখানে প্রযোজককে খুশি মতো শেয়ারমানি দেওয়া হয় ৷ তা আর মানা হবে না। শেয়ারমানির সমতা চাই।’

তিনি বলেন, ‘প্রযোজকরা সিনেপ্লেক্সে ফোন করলে ফোন ধরা হয় না। এসব বন্ধ করতে হবে। এসব বন্ধ করা না হলে আমরা সিনেমা দেওয়া বন্ধ করে দিবো। আর অন্যায়, অসংগতি মেনে নেওয়া হবে না।’

এ সময় সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহবায়ক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষ প্রযোজকদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরন করছেন। এ আচরণ একজন প্রযোজকের জন্য অসম্মানজনক। আমরা টাকা লগ্নি করে সিনেমা বানাই আর আমাদের সাথে যা তা তা আর হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ডেডবডির সাথে অন্যায় করা হয়েছে। এ সিনেমাকে এমন শো দেওয়া হয়েছে যে শোর টিকেট ৫ শত টাকা। আর অফ টাইমে শো চালানোর সিডিউল করা হয়েছে। তা ডেডবডির সাথে চত্রুান্ত এবং উদাসিনতা ছাড়া কিছু নয়।’ ‘ঈদের সিনেমা শো নিয়ে ঈদ সিনেমার পরিচালকদের অভিযোগ রয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই শো কমিয়ে দেওয়া হয়। ষ্টার সিনেপ্লেক্সে তাদের ইচ্ছে মতো সিনেমা চালান। যা বাংলাদেশের সিনেমার বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।’

সুপরিকল্পিত ভাবে বাংলা সিনেমা ধ্বংসের পায়তারা করছে। ইকবালের সিনেমা নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে সেটি একজন প্রযোজক ও পরিচালকের জন্য লজ্জার। আমাদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে সিনেপ্লেক্স। এছাড়া আরও নানা অভিযোগ তো রয়েছেই।’

নীতিমালা পরিবর্তন না হলে সিনেমা না দেওয়ার হুমকি দেন খসরু। তাদের দাবি না মানা হলে প্রযোজক-পরিচালকরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান।