পাথরে কাঁচি শান করে চলে তাদের জীবিকা

পাথরে কাঁচি শান করে চলে তাদের জীবিকা

বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে ঘূর্ণনরত মস্তবড় গোলাকার একটি পাথরের উপর চমৎকার হস্তশৈলীতে ঘর্ষণবলের সাহায্য নিয়ে শান দেওয়া হচ্ছে কাঁচি। সেই কাঁচি ব্যবহৃত হয় নরসুন্দর দিয়ে চুল কাটা, দর্জির কাপড় কাটা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ কাজে। বর্তমানে কাঁচির পাশাপাশি শান দেওয়া হয় বৈদ্যুতিক ট্রিমার।

কোরবানি ঈদ আসলে ছুরি, চাপাতি, তাশতাল শান দেওয়ার ধুম থাকলেও বছরের বাকী সময়ে শান দেওয়া লোকগুলোর জীবিকা চলে শুধু কাঁচি ও দা-বটি শান দিয়ে। সময়ের সাথে মানুষের মাঝে লেগেছে আধুনিকতার নান্দনিক ছোঁয়া। বৈদ্যুতিক ট্রিমার দিয়ে চুল কাঁটায় ঝুঁকছে মানুষ, কমছে কাঁচির ব্যবহার। গার্মেন্টস কারখানায় মানুষজন মেশিনে তৈরী পোশাকের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে। তাদের তৈরী পোশাকসমূহ সম্পূর্ণ মেশিনে তৈরী হওয়ায় স্থানীয় বাজারে কদর কমেছে গজ কাপড় কেটে সেলাই করা দর্জির। ফলে দিনের ব্যবধানে শান দিতে আসা লোকজন হৃাস পাচ্ছে পর্যায়ক্রমে।

পাথরে ঘর্ষণের দ্বারা কাঁচির ধার বৃদ্ধি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলে মুরাদনগরের সাইম সিকান্দারের পরিবার। মাসিক সল্প আয়ে কষ্টকর জীবনযাপন করলেও দারুণ হস্তশৈলীতে ধরে রেখেছেন ঐতিহ্যবাহী ছুরি-কাঁচি শান দেওয়ার ব্যবসাটি। উপজেলা সদরের গোমতী মার্কেটে এককোণে নীরব পরিবেশে মনের আনন্দে শান দিয়ে যাচ্ছেন যন্ত্রপাতি।

কাঁচি শান দিতে আসা একজন নরসুন্দর বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের চুল কেটে কাঁচির ধার কমে যায়। তখন চুল কাটতে কষ্ট পোহাতে হয়। তাদের কাছে আসলে সহজেই কাঁচির ধার বৃদ্ধি করে দেয়। আগে কাঁচি ধার দিতে কুমিল্লা যাওয়া লাগতো। এখন নিজের উপজেলায় শান দিতে পারায় ভোগান্তি কমেছে আমাদের।

সাঈম সিকান্দার বলেন, ছুরিকাঁচি শান দেওয়া শুরু করি মূলত ২০০৭ সালে। এখানে দোকান দিয়েছি ২/৩বছর হবে। তিন সদস্যদের পরিবারের মূল উপার্জনের মাধ্যম এটি। বৈদ্যুতিক ট্রিমার বছরে ১বার শান দিলে বছরখানেক ভালো সার্ভিস দেয়। তাই কাঁচির ব্যবহার কমে গেছে। আগের মতো কাস্টমার আসে না। খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে ব্যবসাটি টিকিয়ে রেখেছি।