নোয়াখালীতে জাল ভোটের হিড়িক: সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বলছে- আমি অসহায়!

নোয়াখালীতে জাল ভোটের হিড়িক: সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বলছে- আমি অসহায়!

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে (২য় ধাপ) চাটখিলে সকাল থেকে কেন্দ্রে-কেন্দ্রে জাল ভোটের হিড়িক।মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেলে উপজেলার পাল্লা মাহাবুব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাংবাদিকেরা পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখেন জাল ভোটের মহোৎসব চলছে। এসব ঐ কেন্দ্রের ৩নং বুথে এক নারী জাল ভোট দিতে দেখে সাংবাদিকেরা উপস্থিত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জাল ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি অসহায়! তার করণীয় কিছুই নেই।

পরে এবিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলতে গেলে ঐ কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতিকের কেন্দ্র আহ্বায়ক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ হোসেন সোহাগ ভোট কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করতে বলেন। এক পর্যায়ে সোহাগ মাঠে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয় সাংবাদিকদের আক্রমন করতে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় সাংবাদিকেরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।

এরআগে সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ কালে দুপুরে উপজেলার সাধুরখিল এআই দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় চেয়ারম্যান পদে জাহাঙ্গীর কবিরের (বর্তমান চেয়ারম্যান) দোয়াত কলম প্রতিকে ব্যালেট পেপারে অগ্রিম সীল মেরে রাখা হয়েছে। এসময় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কে বিষয়টি অবগত করলে তিনি এটি নিজের দায় নয় বলে সাংবাদিকদের জানান। ঐ বুথে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার  হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাটখিল উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার শাহিন আক্তার। এব্যাপারে তিনিই জবাব দেবেন।

শাহিন আক্তার ব্যালেট পেপারে অগ্রিম সীল থাকার বিষয়ে বলেন, একজন ভোটার ভুলক্রমে ব্যালেট বহি থেকে ব্যালেট ছিঁড়ে দেওয়ার আগেই সীল মেরে ফেলছেন। তবে ঐ ভোটারের হাতে আলাদা ব্যালেট দেখা গেছে। কিন্তু তাৎক্ষনিক ভোটার পরিচয়দানকারী ব্যক্তি বুথ থেকে ছঁটকে পড়েন।

এরপর শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও পাঁচগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহ দোয়াত কলম প্রতিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবিরের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের মাঝে দুপুরের খাবার বিরিয়ানি ও বোতাল জাত পানি বিতরণ করছেন। দেখে বুঝার উপায় নেই এটি ভোট কেন্দ্র নাকি পর্যটন কেন্দ্রে পিকনিক চলছে।

বিষয়টি তাৎক্ষনিক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন কে মুঠো ফোনে জানালে, তিনি বলেন বিধি মোতাবেক প্রার্থী কর্তৃক কিংবা প্রার্থীর পক্ষে কেউ খাবার বিতরণ করতে পারবে না এবং নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কোন কর্মকর্তা বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোন বাহিনীর সদস্য সেই খাবার গ্রহন করতে পারবে না। তিনি এটি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।

উপজেলার ৭০ কেন্দ্রে ভোট গ্রহন কার্যক্রমের মধ্যে সাংবাদিকেরা যতগুলো কেন্দ্র পর্যবেক্ষণে গিয়েছি কোনটিতেই তেমন ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে দোয়াত কলম প্রতিকের প্রার্থীর কর্মী- সমর্থকরা ভোটার লাইনে দৌঁড়ে এসে দাঁড়িয়ে নিজেদের কে ভোটার হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেন। তবে লাইনে দাঁড়ানো অনেকের হাতে দেখা গেছে, ভোট দানের পর দেওয়া অমোচনীয় কালির দাগ রয়েছে। অর্থ্যাৎ তারা ইতোপূর্বে তাদের ভোট দিয়েছেন।

এদিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের নজরুল একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া কালীন সময়ে  দুই তরুণকে আটক করে, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের ভ্রাম্যমান আদালত প্রত্যেককে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করে। দন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে- শামসুল আলমের ছেলে রিমন হোসেন (১৯) ও কপিল উদ্দিনের ছেলে সজিবুর রহমান (১৯)।