টুঙ্গিপাড়ায় ফসল ও বীজ উৎপাদনে অধিক লাভবান কৃষক

টুঙ্গিপাড়ায় ফসল ও বীজ উৎপাদনে অধিক লাভবান কৃষক

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান গম ও পাট বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। তাই ফসলের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনেও আয় বেড়েছে কৃষকদের। এতে উপজেলার কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

এ প্রকল্পের আওতায় গত মৌসুমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৭৫ জন কৃষক ১৭৫০ মন বোরো ধান বীজ, ১৫ জন কৃষক ২০০ মন আউশ ধান বীজ, ৪৫ জন কৃষক ৯০০ মন আমন বীজ ও ৩০ জন কৃষক ৩২০ মন গম বীজ উৎপাদন করেছেন। তারা এসব বীজ নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করেছে। চাষ মৌসুমে নিজেদের জমির ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি স্বল্প মূল্যে মানসম্মত বীজ অন্য কৃষকের কাছে বিক্রি করেছেন। কৃষক এসব বীজ দিয়ে উচ্চ ফলনশীল ধান ও গমের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছেন। ফলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ধান ও গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এতথ্য নিশ্চিত করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিলো মানসম্মত ধান, গম ও পাট বীজ চাষী পর্যায়ে উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা এবং ক্ষুদ্র বীজ শিল্প স্থাপন। এখানে কৃষক শুধু উৎপাদনের সাথেই জড়িত নয়, তারা বীজ উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাদের নিজেদের উৎপাদিত বীজ নিজেরা ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রিও করতে পারছে। এ প্রকল্পের আওতায় বীজ উৎপাদনকারী কৃষককে বীজ, সার বালাইনাশক, বীজ শুকানো ও সংরক্ষণ পাত্র, ময়েশ্চার মিটার, চালনি, মোড়কীকরণের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বীজ উৎপাদনে কৃষাণীদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে তারাও বীজ উৎপাদন করছে। তবে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে চলতি মাসে প্রকল্পটি সমাপ্ত হচ্ছে। 

শ্রীরামকান্দি গ্রামের বোরো বীজ উৎপাদনকারী  কৃষক আনজাল হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের সহায়তায় পাঁচ বছর ধরে বোরো ধানের বীজ উৎপাদন করছি। বর্তমানে অনেক কৃষকেরা বিষয়টি পুরোপুরি আয়ত্ত করে অন্য কৃষকের কাছে মানসম্মত উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছে। ধান বীজ বিক্রি করে আমরা ভালো মুনাফা পাচ্ছি।প্রকল্প শেষ হলেও আমরা ক্ষুদ্র-বিজ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এ কাজ চালিয়ে যাব।

ডুমুরিয়া গ্রামের গম বীজ উৎপাদনকারী কৃষক আতিয়ার শেখ বলেন, আগে শুধু গমের চাষাবাদ করতাম লাভের আশায়। তখন উৎপাদিত গম বাজারে বিক্রি করে সামান্য মুনাফা হত। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে গম বীজ উৎপাদন শুরু করি। উচ্চ ফলনশীল মানসম্মত গম বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করে আয় বৃদ্ধি করতে পেরেছি।

বর্নি ইউনিয়নের কৃষক আক্তার শেখ বলেন, চাষাবাদের মৌসুমে অনেক সময় বীজ পাওয়া যেত না। তাই কোন‌ কোন মৌসুমে চাষাবাদে অনেক দেরি হতো। আর মানসম্মত বীজের অভাবে ফসল উৎপাদন কমে যেত। এখন বাড়ির পাশেই মানসম্মত বোরো, আউশ, আমন ধান ও গমের বীজ কম মূল্যে পাই। ফলশ্রুতিতে কৃষকেরা লাভবানের পাশাপাশি বাচ্চাদের সঠিকভাবে লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি। তাই আমরা আগামীতেও বীজ উৎপাদন চালিয়ে যাবো।