চাটখিলে কিশোর গ্যাং ও মাদকের উৎপাত: জনজীবন বিপর্যস্ত

চাটখিলে কিশোর গ্যাং ও মাদকের উৎপাত: জনজীবন বিপর্যস্ত

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় কিশোর গ্যাং ও মাদকের উৎপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এসব কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের দিবালোকে চেনা অনেকটা কঠিন। এরা দিনের বেলায় কেউ মাছ বিক্রি করে কেউ আবার নারিকেল ও সুপারি বিক্রি করে নিজেদের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। অথচ এরাই রাতের আধাঁরে বেড়িয়ে পড়ে মৎস্য খামার থেকে মাছ চুরি, পাড়া-মহল্লা থেকে নারিকেল ও সুপারি চুরির কাজে। পরে দিনে চুরি করা এসব জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি করে। এদের রয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র। একজনকে কেউ বাধা-নিষেধ করলে মোবাইলে ফোনে অন্যদের ডেকে আনে। গত কয়েকদিন আগে এই কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় পাঁচগাঁও ইউনিয়নে এক সিএনজি চালক নিহত হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব কিশোর গ্যাং ও মাদক সেবীরা রাতে এলাকায় চষে-বেড়ায়। এদের ভয়ে ও আতঙ্কে সাধারন মানুষজন অবাধে চলাফেরা করতে পারে না। এদের আক্রমণ হিং¯্র জন্তর মত। এরা ইতোপূর্বে কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেনীতে পড়–য়া ছাত্ররা স্কুল ত্যাগ করে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত হয়ে অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তরুণ কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারের কথা স্বীকার করে বলেন, গ্রাম পুলিশ দিয়ে তিনি তার এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার থামানোর চেষ্টা করলেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরেকটু নজরদারিত্বে রাখা দরকার।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাটখিল পৌর শহরে এসে স্থানীয় রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধ ঘটিয়ে নিজ এলাকায় চলে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চাটখিল পৌর শহরের বদলকোট রোড, পাল্লা রোড, ভ‚ঁইয়া কলোনী এলাকায়, সোনালী ব্যাংকের ছাঁদে, বিভিন্ন স্কুলের বারান্দায় ও ছাঁদে, খোকন ভিডিও গলিতে, সেন্ট্রাল হাসপাতাল রোডে এদের আনাগোণা দেখা যায়। বিভিন্ন খাবার হোটেল ও চা দোকানে এরা ভদ্রবেশে জোটবদ্ধভাবে বসে থাকে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর সড়কের উপর, বাগানের ভিতর মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আসর বসে। এদের বেশিরভাগই কিশোর গ্যাংয়ের সংক্রিয় সদস্য।

অনুসন্ধানকালে একাধিক অভিবাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বলেন, কিশোর গ্যাং বর্তমান সমাজে ব্যাধিতে রূপান্তর হচ্ছে। এই্ কিশোর গ্যাং আর মাদকের ছোবলে ধংসের দারপ্রান্তে আগামী প্রজন্ম। এরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠে। এই মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পরিবারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বাবা-মায়ের গায়ে হাত তোলার ঘটনাও ঘটেছে। আবার শিক্ষকদের গায়েও এরা হাত তুলতে দ্বিধাবোধ করে না।

চাটখিল থানার অফিসার ইনচার্জ এমদাদুল হকের মুঠো ফোনে বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি ২দিন আগে চাটখিল থানায় যোগদান করেছেন। চাটখিল থানা এলাকাকে মাদকমুক্ত করা ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ অতিতের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান।