দ্বন্দ্ব ভুলে বটবৃক্ষের ছায়াতলে মুরাদনগর আওয়ামী লীগ

দ্বন্দ্ব ভুলে বটবৃক্ষের ছায়াতলে মুরাদনগর আওয়ামী লীগ

কুমিল্লার মুরাদনগরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর আধিপত্যের রেষারেষিতে দীর্ঘ দশ বছর দুই ভাগে বিভক্ত ছিল মুরাদনগর উপজেলার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় পদ নিয়ে ছিল নানা বৈষম্য। ত্যাগীরা মূল্যায়ন পায়নি এমন অভিযোগও ছিল তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের।

কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে পাল্টে যায় মুরাদনগরের চিত্র। কুমিল্লা-৩(মুরাদনগর) থেকে জাহাঙ্গীর আলম সরকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হয়ে মাত্র ৪ মাসে দলীয় সকল ভেদাভেদ ও বৈষম্যকে দূরে রেখে ঢেলে সাজিয়েছেন মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে এক ছাতার নিচে আনতে বুকে টেনে নিচ্ছেন শত্রুমিত্র সবাইকে। সাবেক এমপির অনুসারীরা দলে দলে ছুটে যাচ্ছেন বর্তমান এই সাংসদের ছায়াতলে। তিনিও পূর্বের বৈরিতা ভুলে সাদরে গ্রহণ করছেন সকল নেতাকর্মীকে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ বছর যারা ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের লোক হিসেবে উপজেলায় পরিচিত ছিলেন এখন সবাই বর্তমান সাংসদ ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অনুসারী। দীর্ঘদিন মুরাদনগর আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। যার কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল রুগ্ণ। মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের একটি অফিস পর্যন্ত ছিল না। বর্তমান এই সাংসদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও গতিশীলতায় মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, বিগত ১০ বছর মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল অতি দুর্বল। বেশির ভাগই ছিল পকেট কমিটি। হাইব্রিডরা দলের নেতৃত্বে চলে আসায় অবমূল্যায়ন হয়েছে ত্যাগীদের। দুই ভাগের বিভক্তি ছিল আওয়ামী লীগে। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হতো একক সিদ্ধান্তে ও ঢাকার পাঁচতারকা ভবনে বসে। প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মূল্যায়ন পায়নি। প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাথে ছিল না ওই নেতার যোগাযোগ। বৈষম্য আর নানা ভাগে বিভক্ত ছিল তৃণমূল। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দলের স্বার্থে ,মুরাদনগরের উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যারা নির্বাচনে আমার বিরোধিতা করেছেন তাদের সাদরে গ্রহণ করছি। কারণ দিনশেষে তারাও জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক, আওয়ামী লীগের সৈনিক। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অহিংস সবুজ তিলোত্তমা মুরাদনগর গড়তে চেষ্টা করছি। 

অপরদিকে সাবেক এমপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে মুরাদনগর আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন না। কোন দলীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠানে তাকে পাওয়া যায় না। নির্বাচনের পর মহান মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চে তাঁকে মুরাদনগরে আসতে দেখা যায়নি। নেতাকর্মীদের বিশ্বাস ছিল ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে তার অনুসারীদের পাশে থাকবেন। কিন্তু চিত্র উলটো। সাবেক এমপি এই মুহূর্তে মাঠ ছেঁড়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। কর্মীরা তাকে না পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরতে বর্তমান সাংসদ জাহাঙ্গীর আলম সরকারের উপরই ভরসা রাখছেন।

দলের দুর্দিনে যারা নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, সাবেক সংসদ সদস্যের জন্য রাজপথে লড়াই করেছে সবাইকে বঞ্চিত করেছিলেন ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। বিনিময়ে কাছে টেনেছিলেন জামাত-বিএনপির সময়ে লুটতরাজ করা মানুষগুলোকে। তিনি নেতাকর্মীদের বিপদে পাশে থাকেন না। নেতাকর্মীরা দলের জন্য খেটে মরে, তার মৃত্যু পরবর্তী জানাজায় যদি দলের নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিকে না পাওয়া যায়, মারা গেলে যদি মোবাইলে ফোন দিয়ে সমবেদনা না জানানো হয় তাহলে এমন ব্যক্তির নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন তারা। নেতৃত্ব প্রদানে দক্ষ জাহাঙ্গীর আলম সরকার কারণ তিনি তৃণমূল হতে উঠে আসা ত্যাগী নেতা। তৃণমূলের কর্মীদের দুঃখ কষ্ট তার কানে ভাসে সাইরেনের মতো। আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে তার জীবনের সোনালি যৌবন ত্যাগ করেছেন। সাবেক সাংসদের ন্যায় কোনো পাঁচতারকা ভবনে বসে ব্যবসা ও রাজনীতিকে একই মাপকাঠিতে বিচার করেন নি জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তাই নেতৃত্ব প্রদানে জাহাঙ্গীর আলমের মতো দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তির বিকল্প চিন্তা করা আকাশকুসুম ভাবনা।